কেন আপনার আইফোনের ডিসপ্লে কাজ করছে না?

কেন আমার আইফোনের ডিসপ্লে কাজ করছে না?

আপনার আইফোনের স্ক্রিন হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে? টাচ রেসপন্স করছে না, নাকি পুরোপুরি ব্ল্যাক হয়ে গেছে? এই সমস্যায় পড়লে মাথায় প্রথমেই আসে- “ফোন কি নষ্ট হয়ে গেল?” দুশ্চিন্তা করবেন না! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সামান্য সফটওয়্যার বাগ, স্ক্রিন ফ্রিজ, বা হার্ডওয়্যারের সাধারণ কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো “কেন আপনার আইফোনের ডিসপ্লে কাজ করছে না?” এবং কীভাবে এটি সহজে সমাধান করা যায়। তাই স্ক্রিন ঠিক করার জন্য হাজার টাকা খরচ করার আগে, এই পোস্টটি একবার ভালো করে পড়ে নিন। সমস্যার সহজ সমাধান আপনার হাতের কাছেই থাকতে পারে! 

আইফোনের ডিসপ্লে কাজ না করার সম্ভাব্য কারণ

আইফোনের ডিসপ্লে হঠাৎ করে কাজ করা বন্ধ করে দেয়ার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। কখনো এটি হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা, আবার কখনো সফটওয়্যার বাগ বা সিস্টেম ক্র্যাশের কারণে হয়ে থাকে। আসুন জেনে নেই, কী কী কারণে আপনার আইফোনের ডিসপ্লে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

হ্যাং হওয়া

অনেক সময় আইফোনের সফটওয়্যার হঠাৎ করে হ্যাং হয়ে যায়, যার ফলে স্ক্রিন রেসপন্স করতে চায় না। এটি সাধারণত সিস্টেম বাগ, ফোনের ধারন ক্ষমতা বা স্পেসিফিকেশনের বাইরে ভারী অ্যাপ ব্যবহারের কারণে র‍্যামের ওপর অতিরিক্ত চাপ, অথবা দীর্ঘদিন ধরে ফোন রিস্টার্ট না করার কারণে হতে পারে। 

বিশেষ করে পুরোনো মডেলের আইফোনগুলোর ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়, কারণ সেগুলোর হার্ডওয়্যার নতুন iOS আপডেটের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। 

মেমোরি ওভারলোড

আইফোনের স্টোরেজ এবং র‍্যাম পূর্ণ হয়ে গেলে ডিভাইস ধীরগতির হয়ে যায় এবং ডিসপ্লে ফ্রিজ করতে পারে। বিশেষ করে, যদি ফোনে অনেকগুলো ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ খোলা থাকে, তাহলে সিস্টেম ল্যাগ করে এবং স্ক্রিন সঠিকভাবে কাজ করে না। 

অনেক সময় ফোনের ক্যাশ মেমোরি জমে গিয়ে ডিভাইসের পারফরম্যান্সকে প্রভাবিত করতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ডিলিট করা, ক্যাশ ক্লিয়ার করা এবং অব্যবহৃত অ্যাপ আনইনস্টল করা যেতে পারে।

চার্জারে সমস্যা

আনঅফিসিয়াল বা নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করলে ফোনের ডিসপ্লে ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন যে, চার্জ দেওয়ার সময় তাদের আইফোনের স্ক্রিন ল্যাগ করে বা টাচ ঠিকমতো কাজ করে না। 

এটি সাধারণত লো-ভোল্টেজ পাওয়ার ইনপুট বা চার্জারের ভোল্টেজ ইনকনসিস্টেন্সির কারণে হয়। এছাড়া, চার্জিং পোর্ট বা ক্যাবল ড্যামেজ থাকলে ফোন সঠিকভাবে চার্জ নিতে পারে না, যার ফলে ডিসপ্লে সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপের প্রভাব 

অনেক ব্যবহারকারী আইফোন চালানোর সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেকগুলো অ্যাপ চালু রাখেন, যা ফোনের প্রসেসরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, যদি আপনার ফোনের ধারন ক্ষমতা বা স্পেসিফিকেশনের বাইরে হেভি গেমিং অ্যাপ, ভিডিও এডিটিং অ্যাপ বা স্ট্রিমিং সার্ভিসের অ্যাপ চালু থাকে, তাহলে ফোনের স্ক্রিন হ্যাং হতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো বন্ধ করে দেওয়া, র‍্যাম ফ্রি করা এবং ফোনটি মাঝে মাঝে রিস্টার্ট করা যেতে পারে।

ফোন গরম হওয়া

আইফোন দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে বা উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশে থাকলে অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। এটি হলে আইফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু ফাংশন সীমিত করে ফেলে যাতে ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর ফলে, ডিসপ্লে ঠিকমতো কাজ না করতে পারে, স্ক্রিন রেসপন্স ধীর হয়ে যেতে পারে, অথবা ফোন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

হার্ডওয়্যার সমস্যাগুলো

আইফোনের ডিসপ্লে কাজ না করার অন্যতম প্রধান কারণ হলো হার্ডওয়্যার সমস্যা। যদি আপনার ফোন কোথাও পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে থাকে, তাহলে ডিসপ্লের অভ্যন্তরীণ কোনো অংশ ড্যামেজ হতে পারে। এতে স্ক্রিন পুরোপুরি কালো হয়ে যেতে পারে, বা স্পর্শ করলে কোনো রেসপন্স নাও করতে পারে। 

আবার আপনার আইফোন যদি ওয়াটারপ্রুফ না হয়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় আইফোনে পানি প্রবেশের ফলে স্ক্রিনের ভেতরের সার্কিট নষ্ট হয়ে যায়। 

আরেকটি হার্ডওয়্যার সমস্যা হলো স্ক্রিন কানেকশন লুজ হয়ে যাওয়া। যদি আইফোনের অভ্যন্তরীণ ডিসপ্লে কানেক্টর কোনো কারণে ঠিকমতো যুক্ত না থাকে, তাহলে ডিসপ্লেতে কোনো কিছু দেখা যাবে না বা স্ক্রিন ঠিকভাবে রেসপন্স করবে না।

সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যা

অনেক সময় আইফোনের সফটওয়্যার ক্র্যাশ করলেও স্ক্রিন হ্যাং বা ব্ল্যাক হয়ে যেতে পারে। যদি আইফোনের অপারেটিং সিস্টেম (iOS) কোনো কারণে সঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে ফোন অন থাকলেও ডিসপ্লেতে কিছুই দেখা যাবে না। বিশেষ করে, নতুন iOS আপডেট করার পর যদি কোনো বাগ থেকে থাকে, তাহলে স্ক্রিন ফ্রিজ হওয়া অথবা টাচ রেসপন্সে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে থার্ড পার্টি কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার পর আইফোনের স্ক্রিন ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু ইনকম্প্যাটিবল অ্যাপ স্ক্রিনের রেসপন্স সিস্টেমকে প্রভাবিত করে, ফলে টাচস্ক্রিন ঠিকমতো কাজ করে না।

ব্যাটারি ও পাওয়ার সমস্যা

আপনার আইফোনের ব্যাটারি হেলথ যদি অনেক কমে যায় যায় বা চার্জ নিতে সমস্যা হয়, তাহলে স্ক্রিন কাজ নাও করতে পারে। ফোন চার্জে দিলেও যদি বন্ধ থাকা ডিসপ্লেতে কিছুই না আসে, তাহলে হয়তো ব্যাটারি অথবা পাওয়ার সংযোগে সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় ব্যাটারি ফুলে গেলে বা ফোনের পাওয়ার বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়।

স্ক্রিন প্রোটেক্টর বা অ্যাক্সেসরিজ সমস্যা

অনেক ইউজার আইফোনের স্ক্রিনে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য স্ক্রিন প্রটেক্টর বা গ্লাস ব্যবহার করেন। কিন্তু কিছু নিম্নমানের স্ক্রিন প্রটেক্টর বা বেশি পুরু গ্লাস ব্যবহার করলে টাচ রেসপন্স কমে যেতে পারে বা একদমই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

কিছু ক্ষেত্রে নিম্নমানের কভার বা ম্যাগনেটিক কেস ব্যবহারের কারণে আইফোনের ডিসপ্লেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু কভার বা কেসের ম্যাগনেটিক এড়িয়া আইফোনের স্ক্রিন সেন্সরকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে স্ক্রিনের রেসপন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আইফোনের ডিসপ্লে কাজ না করার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সমস্যার উৎস বুঝতে পারলেই এর সমাধান করা সহজ হয়ে যায়। পরবর্তী অংশে আমরা আইফোনের ডিসপ্লে ঠিক করার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে আপনি নিজের ফোনটি সহজেই সচল করে তুলতে পারেন।

আরও পড়ুন – স্মার্টফোনের ডিসপ্লে ফ্লিকারিং সমস্যা সমাধানে কৌশল

সমস্যা সমাধানের উপায়

আইফোনের ডিসপ্লে কাজ না করলে তা বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।প্রথমেই সার্ভিস সেন্টারে না গিয়ে ধৈর্য ধরুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখানে কিছু সমাধান দেওয়া হলো, যা আপনি নিজেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

সহজ ও সাধারণ সমাধান

আপনার আইফোনের ডিসপ্লে যদি আচমকা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে প্রথমেই ফোন রিস্টার্ট করুন। অনেক সময় সামান্য সফটওয়্যার গ্লিচ বা সাময়িক স্ক্রিন ফ্রিজ হওয়ার কারণে ডিসপ্লে কাজ নাও করতে পারে। আইফোন রিস্টার্ট করলে এসব সমস্যা দূর হয়ে যায়।

যদি ডিসপ্লেতে কিছুই না আসে, তাহলে ফোর্স রিস্টার্ট করার চেষ্টা করুন। মডেলের উপর নির্ভর করে ভিন্নভাবে এটি করতে হয়ঃ

  • iPhone 8 এবং এর পরবর্তী মডেল: ভলিউম আপ বোতাম চাপুন, তারপর ভলিউম ডাউন বোতাম চাপুন, এরপর পাওয়ার বোতাম (সাইড বাটন) ধরে রাখুন যতক্ষণ না Apple লোগো আসে।
  • iPhone 7 সিরিজ: ভলিউম ডাউন ও পাওয়ার বোতাম একসাথে ধরে রাখুন যতক্ষণ না Apple লোগো দেখায়।
  • iPhone 6s বা তার পুরোনো মডেল: হোম বোতাম এবং পাওয়ার বোতাম একসাথে ধরে রাখুন যতক্ষণ না স্ক্রিন চালু হয়।

এর পাশাপাশি স্ক্রিন পরিষ্কার করুন এবং স্ক্রিন প্রটেক্টর বা কেস খুলে দেখুন। অনেক সময় স্ক্রিন প্রটেক্টরের কারণে টাচ ঠিকমতো কাজ করতে চায় না।

সফটওয়্যার সংক্রান্ত সমাধান

যদি সহজ সমাধানগুলো কাজ না করে, তাহলে এটি সফটওয়্যারজনিত সমস্যা হতে পারে। প্রথমে চেক করুন যে iOS আপডেট করা আছে কিনা। আপডেটেড হবার পরেও আপনার আইফোনে যদি স্ক্রিন রেসপন্স না করে, তাহলে DFU (Device Firmware Update) মোড ব্যবহার করে রিস্টোর করার চেষ্টা করুন। এটি আইফোনের ডিপ রিকভারি মোড, যা সফটওয়্যার সমস্যা সমাধান করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এই পদ্ধতিতে ডাটা হারানোর ঝুঁকি থাকে, তাই আগে ব্যাকআপ নেওয়া ভালো।

এছাড়া, যদি কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ ইনস্টল করার পর ডিসপ্লে সমস্যায় পড়ে থাকেন, তাহলে সেই অ্যাপটি আনইনস্টল করে দেখুন। কিছু অ্যাপ সফটওয়্যার কনফ্লিক্ট তৈরি করতে পারে, যার ফলে স্ক্রিনের কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। 

হার্ডওয়্যার সমস্যার সমাধান

যদি উপরের কোনো পদ্ধতিই কাজ না করে, তাহলে এটি হয়তো হার্ডওয়্যার সমস্যার কারণে হয়েছে। যদি আইফোন পানিতে পড়ে গিয়ে থাকে বা কোন উঁচু স্থান থেকে পড়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ডিসপ্লে রিপ্লেসমেন্ট করার প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া যদি আপনার আইফোন চার্জে দিলে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখায় তবে, চার্জিং পোর্ট, ব্যাটারি, অথবা মাদারবোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।

আরও পড়ুন – ফোনের ডিসপ্লে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে করণীয়

কখন একজন টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিতে হবে?

আইফোনের ডিসপ্লে সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই সমাধান করা সম্ভব। তবে কিছু পরিস্থিতিতে একজন পেশাদার টেকনিশিয়ানের সাহায্য নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না। যদি নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক সমস্যা আপনার আইফোনে দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডিসপ্লে একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলে

যদি আইফোন চালু থাকলেও স্ক্রিন একেবারে কালো হয়ে থাকে এবং ফোর্স রিস্টার্ট, চার্জিং বা সফটওয়্যার আপডেটের পরও কাজ না করে, তাহলে এটি ডিসপ্লে বা মাদারবোর্ড সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, একজন টেকনিশিয়ান ফোন খুলে হার্ডওয়্যার পরীক্ষা না করলে সমস্যার আসল কারণ বোঝা কঠিন।

স্ক্রিন ফিজিক্যালি ড্যামেজ হলে 

আইফোন যদি হাত থেকে পড়ে গিয়ে থাকে এবং এতে ফাটল ধরে বা স্ক্রিন ভেঙে যায়, তাহলে সেটি ঠিক করার জন্য পেশাদার সাহায্য নেওয়া জরুরি। যদিও ফাটল থাকলেও কিছুক্ষেত্রে টাচস্ক্রিন কাজ করতে পারে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আইফোন পানির সংস্পর্শে আসলে

আইফোনের নতুন মডেলগুলো ওয়াটারপ্রুফ হলেও অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে আসলে ডিসপ্লেতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পানিতে পড়ে যাওয়ার পর স্ক্রিন যদি ঝাপসা দেখায়, টাচ রেসপন্স ধীর হয়ে যায়, বা একেবারেই কাজ না করে, তাহলে এটি হার্ডওয়্যার জনিত সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত একজন টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফোনের অভ্যন্তরীণ অংশ পরীক্ষা করানো উচিত।

স্ক্রিনের কিছু অংশ কাজ করছে, কিছু অংশ করছে না

যদি আপনার আইফোনের স্ক্রিন আংশিকভাবে কাজ করে, অর্থাৎ কিছু জায়গায় টাচ ঠিকভাবে রেসপন্স করে কিন্তু কিছু অংশ একেবারে নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে এটি হার্ডওয়্যার সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে স্ক্রিন রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে, যা একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান ছাড়া সম্ভব নয়।

ফোন বেশি গরম হচ্ছে এবং স্ক্রিন রেসপন্স করছে না

যদি আপনার আইফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং সেই সঙ্গে স্ক্রিন হ্যাং বা রেসপন্স করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে এটি ব্যাটারি বা মাদারবোর্ড সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দীর্ঘদিন অবহেলা করলে ফোন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই দ্রুত সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত।

আইফোনের স্ক্রিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করছে (Ghost Touch Issue)

অনেক সময় আইফোনের ডিসপ্লে নিজে নিজেই বিভিন্ন অ্যাপ ওপেন করে বা স্ক্রিনে টাচ ছাড়াই নানা কাজ হতে থাকে। একে “Ghost Touch” সমস্যা বলা হয়। সাধারণত এটি ডিসপ্লে কানেক্টরের সমস্যা, স্ক্রিনের ভেতরের সার্কিট ড্যামেজ, অথবা সফটওয়্যার বাগের কারণে হতে পারে। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে স্ক্রিন পরিবর্তন করার দরকার হলে একজন টেকনিশিয়ান প্রয়োজন।

ফাটা স্ক্রিন, টাচ কাজ না করা, বা ডিসপ্লে ব্ল্যাকআউট- Apple Gadget Care দিচ্ছে যেকোনো সমস্যার দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সমাধান। Apple Gadget Care নিয়ে এসেছে দ্রুত, বিশ্বস্ত ও উচ্চমানের আইফোন ডিসপ্লে রিপেয়ার ও রিপ্লেসমেন্ট সেবা। আমাদের দক্ষ টেকনিশিয়ানরা জেনুইন পার্টস ব্যবহার করে আপনার আইফোনে ফিরিয়ে দেবে একদম নতুনের মতো লুক ও পারফরম্যান্স! সাশ্রয়ী খরচে দ্রুত সার্ভিস পেতে আজই Apple Gadget Care-এ চলে আসুন এবং নিশ্চিন্তে আপনার আইফোনের সমস্যার সমাধান করুন!

আইফোনের ডিসপ্লে রক্ষা করার টিপস

আইফোনের ডিসপ্লে অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং দামি। তাই অযথা ক্ষতি এড়াতে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। নিচে কিছু কার্যকর টিপস দেওয়া হলো, যা আপনার আইফোনের ডিসপ্লে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

১. স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুনঃ আপনার আইফোনের স্ক্রিন যাতে কোনোভাবে স্ক্র্যাচ না পড়ে বা ফাটল না ধরে, সে জন্য গুড কোয়ালিটি টেম্পার্ড গ্লাস বা স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করুন। এটি সরাসরি স্ক্রিনের ওপরে একটি অতিরিক্ত প্রোটেক্টিভ লেয়ার তৈরি করে, যা ছোটখাটো আঘাত, ধুলো বা নোংরা থেকে ডিসপ্লেকে বাঁচায়।

২. শক্তপোক্ত ফোন কভার ব্যবহার করুনঃ ফোন হাত থেকে পড়ে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ডিসপ্লের। তাই শক্ত ও ভালো মানের কভার বা কেস ব্যবহার করা উচিত। বাম্পার কেস বা শক-প্রুফ কভার ব্যবহার করলে ফোনের স্ক্রিন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

৩. পরিষ্কার রাখুনঃ স্ক্রিনে ধুলো-ময়লা জমে গেলে এটি টাচ সেনসিটিভিটি কমিয়ে দিতে পারে। তাই নরম মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে নিয়মিত স্ক্রিন পরিষ্কার করুন। পানি বা তরল কোনো কিছু ব্যবহার না করাই ভালো, তবে যদি খুব প্রয়োজন হয়, তাহলে সামান্য পরিমাণ স্ক্রিন ক্লিনার স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

৪. অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করবেন নাঃ আইফোনের ডিসপ্লে হাই-সেনসিটিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করে। তাই শক্তভাবে স্ক্রিনে চাপ দেওয়া বা শক্ত কিছু দিয়ে স্ক্রিন টাচ করা উচিত নয়। বিশেষ করে গ্লাস প্রটেক্টর থাকলে অতিরিক্ত চাপ দিলে সেটি ভেঙে গিয়ে, স্ক্রিনের ওপরও প্রভাব ফেলে।

৫. পানি ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুনঃ আইফোনের অনেক মডেল ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট হলেও এটি পুরোপুরি ওয়াটারপ্রুফ নয়। অতিরিক্ত পানির সংস্পর্শে এলে স্ক্রিনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বৃষ্টিতে, রান্নাঘরে, বা সুইমিং পুলের পাশে আইফোন ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন। যদি ফোন পানিতে পড়ে যায়, দ্রুত শুকনো কাপড়ে মুছে নিন এবং প্রয়োজনে টেকনিশিয়ানের সাহায্য নিন।

৬. নিম্নমানের চার্জার ও অ্যাডাপ্টার এড়িয়ে চলুনঃ নিম্নমানের বা আনঅফিসিয়াল চার্জার ব্যবহার করলে ডিসপ্লেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন স্ক্রিন ঝলকানো বা টাচ ঠিকমতো না কাজ করা। তাই সবসময় Apple-এর অফিসিয়াল চার্জার বা ভালো মানের MFi (Made for iPhone) সার্টিফায়েড চার্জার ব্যবহার করুন।

৭. ফোনের ভারী অ্যাপ ও সফটওয়্যার আপডেটঃ অনেক সময় পুরোনো সফটওয়্যার বা ফোনের ধারণক্ষমতার চেয়ে ভারী অ্যাপ ব্যবহারের কারণে স্ক্রিন ল্যাগ বা হ্যাং হয়ে যায়। তাই iOS নিয়মিত আপডেট করুন এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ ফেলুন।

আইফোনের ডিসপ্লে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে হলে সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে। এসব বিভিন্ন ছোটখাটো বিষয় মেনে চললে আপনার আইফোনের ডিসপ্লে হবে দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর। 

উপসংহার

আইফোনের ডিসপ্লে কাজ না করা একটি বিরক্তিকর ও জটিল সমস্যা হলেও সঠিক কারণ বুঝে, সঠিক পদক্ষেপ নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি সমাধান করা সম্ভব। অনেক সময় সাধারণ সফটওয়্যার ত্রুটি বা অপ্রয়োজনীয় সেটিংস পরিবর্তনের মাধ্যমে স্ক্রিন সচল করা যায়।

এভাবে যদি কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না হয়, তবে দেরি না করে একজন দক্ষ টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, ছোট সমস্যাগুলো সময়ের সঙ্গে বড় হয়ে যেতে পারে এবং পুরো ফোনের কার্যকারিতাকে ব্যাহত করতে পারে। তাই সচেতন ব্যবহার ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণই হতে পারে আপনার আইফোনের ডিসপ্লে ভালো রাখার মূল চাবিকাঠি।

Chat with us