আধুনিক জীবনে স্মার্টফোন আমাদের অপরিহার্য সঙ্গী। কিন্তু ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া একটি বিরক্তিকর সমস্যা যা আমাদের সকলেরই হয়। ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা স্মার্টফোনের ব্যাটারি নষ্ট হবার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করবো এবং কিভাবে সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তার উপায় দেখবো।
ব্যাটারি নষ্ট হবার কারণসমূহ
১ । অতিরিক্ত ব্যবহার
স্মার্টফোন বেশি ব্যবহার করলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে ভিডিও দেখা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যাটারির উপর চাপ সৃষ্টি করে। তাছাড়া লম্বা সময় ধরে গেম খেলা, লম্বা সময় কথা বলা এটা ব্যাটারির আয়ু কমার একটা কারণ।
২ । অতিরিক্ত ব্রাইটনেসে ফোন ব্যবহার করা
ফোনের স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্রাইটনেস ব্যাটারির জন্য খুব ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্রাইটনেস ফোনের ব্যাটারি দ্রুত শেষ করে।
৩। ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন
অনেক অ্যাপ্লিকেশন চালু থাকলে এবং ব্যবহার না করা হলেও ব্যাটারির শক্তি খরচ করে। সেক্ষেত্রে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন গুলো ফোনের ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ থাকে। ফলে ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
৪। ভুল চার্জিং অভ্যাস
বারবার চার্জ দেওয়া,অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া, এবং খারাপ মানের চার্জার ব্যবহার ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। তাছাড়া 100% এর বেশি চার্জ করা, চার্জারে দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া, ভুল তাপমাত্রায় চার্জ দেওয়া (অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা) এইসব অভ্যাস ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয় এবং দ্রুত নষ্ট করে।
৫। অস্বাভাবিক তাপমাত্রা
খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়। খুব বেশি গরমে (40°C এর বেশি) ফোন ব্যবহার করা বা রাখা, খুব বেশি ঠান্ডায় (0°C এর কম) ফোন ব্যবহার করা বা রাখা। এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা ব্যাটারির রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোকে ব্যাহত করে এবং দ্রুত ক্ষতি করে।
৬। ব্যাটারি পরিবর্তন
যদি ব্যাটারি খুব পুরোনো হয় তাহলে নতুন ব্যাটারি দিয়ে পরিবর্তন করে ফেলুন। সকল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিরই একটি নির্দিষ্ট আয়ু থাকে। সাধারণত 2-3 বছর ব্যবহারের পর ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে।
ব্যাটারি নষ্ট হবার প্রতিকার
ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এই আর্টিকেলে আমরা সেই কারণগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি এবং কিভাবে সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তার উপায় দেখিয়েছি।
এখানে আমরা ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করার কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরছি
১। অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমান
- প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার না করা।
- ব্যবহার না করা অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ রাখা।
- ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ বন্ধ করা।
- লোকেশন সার্ভিস বন্ধ রাখা (প্রয়োজন না হলে)।
- ব্লুটুথ, ওয়াইফাই এবং মোবাইল ডেটা বন্ধ রাখা (প্রয়োজন না হলে)।
- ‘পাওয়ার সেভিং মোড’ ব্যবহার করা।
২ । উজ্জ্বলতা কমান:
- স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা যতটা সম্ভব।
- ‘অটো-ব্রাইটনেস’ ব্যবহার করা।
- ‘ডার্ক মোড’ ব্যবহার করা (যদি ফোনে থাকে)।
৩ । চার্জিং অভ্যাস:
- নিয়মিত চার্জ করা, অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া এড়ানো।
- 20% থেকে 80% এর মধ্যে ব্যাটারি চার্জ রাখার চেষ্টা করা।
- ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করা।
- অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করা (যদি সম্ভব হয়)।
- চার্জারে দীর্ঘ সময় রেখে না দেওয়া।
- ভুল তাপমাত্রায় চার্জ দেওয়া এড়ানো (অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা)।
অন্যান্য টিপস
- ওয়ালপেপার হিসেবে ডার্ক থিম ব্যবহার করা।
- ‘লাইভ ওয়ালপেপার’ ব্যবহার করা এড়ানো।
- ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখা।
- ফোন নিয়মিত আপডেট করা।
- ফোন কেস ব্যবহার করা (যাতে ফোন ঠান্ডা থাকে)।
- খুব বেশি গরমে বা ঠান্ডায় ফোন ব্যবহার করা এড়ানো।
- পানিতে ভেজা থেকে রক্ষা করা।
- সম্ভব হলে নতুন ব্যাটারি ব্যবহার করা (যদি ব্যাটারি খুব পুরোনো হয়)।
মনে রাখবেন
কিছু সচেতনতার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী করতে পারি। উপরে উল্লেখিত টিপসগুলো সকল ফোনের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তবে উল্লেখিত টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে পারবেন এবং বারবার ব্যাটারি পরিবর্তনের ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন।