ব্যাটারি ফুলে যাওয়া সমস্যা এবং সমাধান

ব্যাটারি ফুলে যাওয়া সমস্যা এবং সমাধান: জানুন সমস্যাগুলির কারণ ও সমাধান

ব্যাটারি ফুলে যাওয়া সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে কী আপনিও বেশ চিন্তিত? আমাদের দেশের উচ্চতাপমাত্রার কারণে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়াও অতিরিক্ত চার্জিং, নকল চার্জার, বা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার এসব কারণেও এই সমস্যা হয়ে থাকে।। তবে, ডিভাইস ঠান্ডা রাখলে, স্মার্ট চার্জিং করলে এবং অরিজিনাল চার্জার ব্যবহারে ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশেই রোধ করা যায়।

কিন্তু আপনি যদি এই সমস্যাটি উপেক্ষা করেন তাহলে ডিভাইসের বড় কোনো ক্ষতি হতে পারে। তাই অবহেলা না করে সময়মতো ব্যবস্থা নিয়ে নেয়াই উত্তম।

ব্যাটারি ফুলে যাওয়া সমস্যা ও সমাধান; ৫টি প্রধান কারণ ও প্রতিকার

কিছু সাধারণ বিষয় না জানার কারণে আমাদের ডিভাইসের ব্যাটারি ফুলে যায়। তবে একটু সতর্ক থাকলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। চলুন দেখে নিই সেগুলি কী কীঃ 

সমস্যা ১: অতিরিক্ত চার্জিং বা ওভারচার্জিং

রাতে অনেকেই আমরা ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলি চার্জে দিয়ে ঘুমোতে যাই। ঘটনাটি খুব কমন এবং স্বাভাবিক মনে হলেও আপনার ডিভাইসের জন্য এটি অনেক ক্ষতিকর। সাধারণত একটি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ফুল চার্জড হতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় নেয়। কিন্তু আমরা সারারাত সেগুলিকে চার্জে দিয়ে রাখি। এতে ব্যাটারির ভেতর গ্যাস তৈরি হয় এবং ব্যাটারি ফুলে ঊঠে। 

সমাধান:

১. চার্জিং টাইমার সেট করুন: চার্জ কন্ট্রোলার ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে চার্জিং বন্ধ করে দিন। এবং সারারাত চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

২. চার্জ ২০-৮০% এর মধ্যে রাখুন: এক গবেষণায় বলছে, যদি ব্যাটারি ৮০% পর্যন্ত চার্জ করা হয়, তাহলে লিথিয়াম আয়নের চাপ কমে। এতে ব্যাটারির আয়ু বাড়ে।

৩. স্মার্ট চার্জিং ফিচার ব্যবহার করুন: অ্যাডাপ্টিভ চার্জিং টেকনোলজি আপনার চার্জিং হ্যাবিট এর সাথে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। এটি চার্জিং গতিও নিয়ন্ত্রণ করে যেন ব্যাটারির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৪. অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন: অরিজিনাল চার্জার নিশ্চিত করে সঠিক ভোল্টেজ ও কারেন্ট। তাই প্রস্ততকারক থেকে প্রাপ্ত চার্জার ব্যবহার করুন। 

সমস্যা ২: অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং গরম পরিবেশ

বাংলাদেশের গরম আবহাওয়া ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার অন্যতম এক কারণ। ৩৫°সে (৯৫°এফ) এর বেশি তাপমাত্রায় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইট দ্রুত ভেঙে যায়। এতে গ্যাস উৎপন্ন হয়। 

সমাধান:

১. ডিভাইস ঠান্ডা জায়গায় রাখুন: যেকোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস এসি রুমে অথবা ঠান্ডা জায়গায় রাখুন। তাপমাত্রা ২০-২৫° সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন।

২. চার্জিংয়ের সময় ব্যবহার এড়িয়ে চলুন: চার্জিংয়ের সময় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করলে ব্যাটারির আয়ু ৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তাই এসময় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 

৩. কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন: গেমিংয়ের সময় কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন। এটি বাজারে ৫০০-১৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।  

৪. তাপমাত্রা মনিটরিং অ্যাপ ব্যবহার করুন: CPU Monitor বা Cooling Master অ্যাপ দিয়ে ডিভাইসের তাপমাত্রা রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করুন। অতিরিক্ত গরম হলে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 

সমস্যা ৩: ভুল বা নকল চার্জার ব্যবহার

ভুল বা নকল চার্জার ব্যবহার করলে ব্যাটারি ফুলে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, খারাপ মানের চার্জার ব্যাটারির ২০-৫০% ক্ষতি করতে পারে। এসকল চার্জার দিয়ে চার্জ দিলে ভোল্টেজ ওঠানামার করে ফলে ব্যাটারি ফুলে যায়। 

সমাধান:

১. শুধুমাত্র অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন: ফোনের প্রস্তুতকারক কোম্পানির অরিজিনাল চার্জার বা সার্টিফাইড রিপ্লেসমেন্ট চার্জার ব্যবহার করুন।

২. MFi বা অনুমোদিত ব্র্যান্ডের চার্জার কিনুন: আইফোনের জন্য MFi সার্টিফাইড চার্জার ব্যবহার করুন। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য USB-IF সার্টিফাইড চার্জার কিনুন।

৩. চার্জার এবং ক্যাবল নিয়মিত পরীক্ষা করুন: প্রতি ৬ মাসে চার্জিং পোর্ট পরিষ্কার করুন। ক্যাবলের কোনো সমস্যা আছে কিনা দেখুন।

৪. পাওয়ার আউটপুট যাচাই করুন: চার্জার কেনার আগে দেখুন তার ভোল্টেজ ও অ্যাম্পিয়ার আপনার ফোনের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী আছে কি না।

সমস্যা ৪: ব্যাটারির বয়স এবং ক্ষয়

ব্যাটারির বয়স এবং রাসায়নিক ক্ষয়ের কারণে মোবাইল ব্যাটারি ফুলে যেতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, ৫০০টি চার্জ সাইকেল পার হলে ব্যাটারি তার ২০% ক্ষমতা হারায়। এর ফলে ব্যাটারির ভেতরে গ্যাস তৈরি হতে থাকে। 

সমাধান:

১. ব্যাটারি হেলথ নিয়মিত চেক করুন: ব্যাটারির হেলথ চেক করতে অ্যান্ড্রয়েডে ফোন অ্যাাপটি খুলুন এবং \*#\*#4636#\*#\* ডায়াল করুন। অথবা সেটিংসে গিয়ে Battery Option এ ক্লিক করুন। এরপর Battery Health Battery Usage – এ গিয়ে আপনি ব্যাটারির আপডেট দেখতে পারবেন। আইফোনের ক্ষেত্রেও Settings > Battery > Battery Health-এ গিয়ে পরীক্ষা করা যায়।

২. ৮০% এর নিচে হেলথ গেলে প্রতিস্থাপন করুন: যদি ব্যাটারি হেলথ ৮০% এর নিচে নেমে যায়, তাহলে নতুন ব্যাটারি কিনুন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই স্তরের নিচে গেলে ব্যাটারি পরিবর্তন করা উচিত।

৩. প্রোঅ্যাক্টিভ ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট: ব্যাটারি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আগেই প্রতিস্থাপন করুন। এতে ফুলে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। 

সমস্যা ৫: অতিরিক্ত ডিসচার্জ এবং ০% পর্যন্ত ব্যাবহার

নিয়মিত ব্যাটারি ০% পর্যন্ত ব্যবহার করা ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার আরেকটি কারণ। পুরোপুরি ডিসচার্জ ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ কাঠামো নষ্ট করে। যদি অনেক দিন চার্জ না করা হয় তাহলে লিথিয়াম প্লেটিং হয়ে গ্যাস তৈরি হতে পারে। এভাবেই, পাওয়ার ম্যানেজমেন্টের অভাবে ব্যাটারির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে।

সমাধান:

ব্যাটারির চার্জ ২০% এর নিচে নামানো যাবে না। চার্জ ২০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখলে ব্যাটারি অনেকদিন টেকে। নিয়মিত টপ-আপ চার্জিং করলে ব্যাটারি নিরাপদ থাকে। 

এছাড়াও পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার করলে ব্যাটারির উপর কম চাপ পড়ে। ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন সেটিংস চালু করে অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড ইউজও কন্ট্রোল করা যেতে পারে।

একনাগারে ব্যাটারির ফুলে যাওয়া এড়াতেকিছু সতর্কতা

আধুনিক ডিভাইসের ব্যাটারি ফুলে যাওয়া একটি বড়  সমস্যা। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উষ্ণ আবহাওয়ার দেশে এটি আরও গুরুতর । তবে ২০২৪ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় জানা গেছে, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাটারির আয়ু ৪০% পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। আমাদের দেশের আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ, তাই ব্যাটারির রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের ভালো করে শিখতে হবে। 

১. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: ডিভাইস ৩৫°সে. এর নিচে রাখুন। বেশি তাপে রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্রুত হয়।

২. চার্জিং পদ্ধতি: ১০০% চার্জ এড়িয়ে ২০-৮০% চার্জ রাখুন। রাতভর চার্জে রাখবেন না।

৩. গুণমান নিশ্চিতকরণ: শুধু অরিজিনাল চার্জার ব্যবহার করুন। নিম্নমানের চার্জার ভোল্টেজের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

৪. পরিবেশগত সুরক্ষা: সরাসরি সূর্যালোক ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে।

৫. ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: একসাথে অনেক ভারী অ্যাপ্লিকেশন চালানো থেকে বিরত থাকুন।

৬. নিয়মিত পরীক্ষা: ব্যাটারির শারীরিক অবস্থা মাসে একবার পরীক্ষা করুন।

৭. জরুরি ব্যবস্থা: যদি ব্যাটারি অতিরিক্ত ফুলে যায়, তবে অবিলম্বে ব্যবহার বন্ধ করুন এবং অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টারে যান।

শেষ কথা

এতক্ষণে নিশ্চয় আপনি জানেন ব্যাটারি ফুলে যাওয়া সমস্যা ও সমাধান কী কী। তাই, ব্যাটারির সুষ্ঠু পরিচর্যা করে আপনার পছন্দের ডিভাইসকে রক্ষা করুন। সমস্যা যদি গুরুতর হয় তাহলে যোগাযোগ করুন Apple Gadget Care সেন্টারে. আমাদের দক্ষ টেকনিশিয়ানরা সবসময় প্রস্তত আপনার ডিভাইসের যেকোনো সমস্যায় সমাধানে। 

Chat with us