ফোন হ্যাক হলে কিভাবে বুঝবেন হ্যাকরোধে সচেতনতা
আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, আপনার ফোনের ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে? এই পরিস্থিতি সাধারণত অস্বাভাবিক। বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যবসা, শিক্ষা, যোগাযোগ ও বিনোদন—সব ক্ষেত্রেই আমরা স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এর অপব্যবহারও ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। ফোন হ্যাকিং একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে, যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে নিয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পর্যন্ত সবকিছুকে বিপদের সম্মুখীন করতে পারে। এর ফলে অনেকেই তাদের মূল্যবান তথ্য হারিয়েছেন। এজন্য আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় সচেতন থাকাসহ ফোন হ্যাকড হওয়ার লক্ষণগুলো সনাক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
কিভাবে বুঝবেন ফোন হ্যাকড হয়েছে?
মোবাইল ফোন হ্যাকিংয়ের বিভিন্ন লক্ষণ সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব, তবে কিছুটা সচেতনতা এবং নিয়মিত মনিটরিং অপরিহার্য। এখানে ফোন হ্যাকড হওয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
১. ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়া
আগে সকালে আপনার মোবাইলটি ফুলচার্জ করে বেড়িয়েছেন। আগে বিন্দাস ফোনটি চার্জ ধরে রাখতো। কিন্তু এখন লক্ষ্য করেছেন যে আপনার ফোনের ব্যাটারি অতিরিক্ত দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত ব্যাটারির সমস্যা থেকে হতে পারে, তবে যদি আপনার ফোনের ব্যাটারি ঠিকঠাক থাকে, কিন্তু ব্যাটারি খুব দ্রুত কমে যায়, তাহলে বুঝে নিন যে ফোনে কিছু অস্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে। হ্যাকাররা ফোনে ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার ইনস্টল করলে, সেগুলো ফোনের ব্যাটারি, র্যাম ,সিপিইউ ব্যবহার করে থাকে।যার কারনে ব্যাটারি দ্রুত শক্তি হারায়।
২. মোবাইলটি কাজে গতি হারাবে
হঠাৎ ফোনের স্পিড কমে গেল বা ফোন স্লো হয়ে গেলে, এটি একটি বড় লক্ষণ হতে পারে। যখন ফোন হ্যাক হয়, তখন হ্যাকাররা ফোনের রিসোর্স ব্যবহার করে। যার ফলে ফোন গতি হারাতে থাকে। কখনো কখনো ফোনে অটোমেটিক পপ-আপ, অ্যাপ্লিকেশন নিজে থেকে ওপেন হয়ে যায়। এমনকি বিনা অনুমতিতে বিভিন্ন অ্যাপস ইন্সটল হয়ে যেতে পারে আপনার ফোনে।
৩. অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া
যদি আপনার ফোনটি হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে ফোনের র্যাম ও রমের উপর অতিরিক্ত চাপ পরে।এ জন্য আপনার স্বান্ত ফোনটি অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে উঠে। যদি আপনার ফোন সাধারণভাবে গরম না হয়ে থাকে তবে হঠাৎ গরম হতে শুরু করলে নিজ থেকেই তবে বুঝতে হবে আপনার ফোনটি কারো দ্বারা চালিত হচ্ছে। এটি হ্যাকিংয়ের একটি সাধারণ লক্ষণ।
৪. ভয়েস কোয়ালিটি খারাপ হওয়া
হঠাৎ ফোনের ভয়েস কোয়ালিটি খারাপ হয়ে গেলে বা ইকো হতে থাকা ফোন হ্যাকড হওয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। হ্যাকাররা দূর থেকে আপনার ফোনে স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে যা ফোনের ভয়েস কোয়ালিটিকে প্রভাবিত করে।
৫. অপরিচিত নম্বর থেকে কল বা টেক্সট আসা
আপনি কি ইদানিং অপরিচিত নম্বর থেকে কল বা টেক্সট পাচ্ছেন? এই ধরনের কল বা টেক্সট একেবারে অদ্ভুত বা অপ্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু তারা আসলে ম্যালওয়্যার বা হ্যাকিং এর অংশ হতে পারে। অনেক সময় হ্যাকাররা আপনার ফোনে তথ্য চুরি করতে কল বা টেক্সট পাঠায়।
৬. অজানা ছবি বা ভিডিও গ্যালারিতে সেইভ হয়ে যাওয়া বা রিমুভ হয়ে যাওয়া
আপনার ফোনের গ্যালারিতে কি এমন ছবি বা ভিডিও দেখা যাচ্ছে, যা আপনি কখনো দেখেননি বা ডাউনলোড করেননি? বা আপনার কাছে যে ছবিটি ছিলো সেটিও এখন খুঁজে পাচ্ছেন না। হ্যাকাররা আপনার ফোনে ঢুকে আপনার ব্যক্তিগত গ্যালারিতে ছবি বা ভিডিও যোগ করতে পারে আবার ডিলিটও করে দিতে পারে।
ফোন হ্যাকিং থেকে বাঁচতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে
যেহেতু মোবাইল ফোন হ্যাকিং একটি মারাত্মক সমস্যা, তাই আপনাকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে আপনার ফোন নিরাপদ থাকে।আপনার তথ্যকে সুরক্ষিত করতে হলে বেশকিছু পদক্ষেপ আপনি গ্রহন করতে পারেন। চলুন জেনে নেয়া যাক কি সেগুলো-
১. ম্যালিসিয়াস অ্যাপস বা সফটওয়্যার এড়িয়ে চলা
অনেক সময় অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে গিয়ে ম্যালিসিয়াস অ্যাপস ইনস্টল করে ফেলি, যা আমাদের ফোনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়। বিশেষ করে অ্যাপস ডাউনলোড করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। শুধুমাত্র বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম যেমন- প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা উচিত। পর্নোগ্রাফি বা কোনো ধরনের সন্দেহজনক গেম ডাউনলোড করার সময়ে এই বিষয়ে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে।
২. ফিশিং সাইট থেকে সাবধান
ফিশিং সাইটগুলিতে গোপন তথ্য চুরির জন্য ক্ষতিকর লিংক থাকে। যদি আপনার ফোনে কোনো সন্দেহজনক টেক্সট আসে এবং তাতে লিংক থাকে, তবে পরামর্শ থাকবে অতিরিক্ত কৌতূহল বশত ক্লিক না করে বসার। ফিশিং সাইটের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার ঢুকিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে অনায়াসেই।
৩. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
ফ্রি জিনিস বাঙ্গালীর পছন্দ তবে মনে রাখুন পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা ফোনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে আপনার ফোনের তথ্য সহজেই চুরি হয়ে যেতে পারে। যদি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করতেই হয়, তবে খুব সতর্কভাবে এবং সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করুন। যদি সম্ভব হয়, একেবারে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. বিশ্বস্ত অ্যাপস এবং ব্রাউজার ব্যবহার করুন
বিশ্বস্ত অ্যাপস এবং ব্রাউজার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্লে স্টোরের বাইরে অ্যাপ ইনস্টল না করার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ অনেক সময় এসব অ্যাপসে ম্যালওয়্যার লুকানো থাকে। এছাড়া, মোবাইল ব্রাউজার নির্বাচনেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স এর মতো নিরাপদ ব্রাউজার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
৫. অটো লগইন মোড বন্ধ রাখুন
অটো লগইন মোডে আপনি যখন কোনো অ্যাপ্লিকেশন বা ওয়েবসাইটে লগইন করেন এবং পরবর্তীতে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগইন হয়ে যায়, তখন হ্যাকাররা সহজেই আপনার তথ্য চুরি করতে পারে। অটো লগইন মোড বন্ধ রাখুন এবং আপনার তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
৬. ফোনের সুরক্ষা সেটিংস এনাবল করুন
ফোনের সুরক্ষা সেটিংসগুলো চালু রাখুন। যেমন পিন, প্যাটার্ন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করুন ফোন আনলক করার জন্য। এটি আপনার ফোনে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারবে না। আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশনও ব্যবহার করতে পারেন, যা আপনার ফোনে প্রবেশকারী ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার সনাক্ত করতে সাহায্য করবে।
৭. আপডেটেড রাখুন ফোনের সফটওয়্যার
আপনার ফোনের সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন। ফোনের সিস্টেমে যেকোনো নতুন আপডেট আসলে সেটি ইনস্টল করে নিন। এই আপডেটগুলিতে নতুন নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত করা থাকে, যা হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি কমায়।
মোবাইল ফোনের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা আজকের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফোন হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে, যা আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ সতর্কতা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করলে আপনি আপনার ফোনকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করতে পারেন। নিজের তথ্য নিরাপদ রাখতে সচেতন থাকুন, এবং ফোন হ্যাকড হওয়ার যেকোনো লক্ষণ প্রথমে শনাক্ত করুন।